মেঘের টানেলে গ্লাইডিং

কেমন হতো যদি মেঘেদের ওপর উঠে দৌড়ঝাঁপ করা যেত? মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগিয়ে যাওয়া যেত সামনে, সার্ফিংয়ের মতো?

অস্ট্রেলিয়ার উত্তরের আকাশে তৈরি হওয়া মর্নিং গ্লোরি মেঘের সঙ্গে এমন সুযোগটাই পাবেন। যদিও সেখানে মেঘের ওপর গ্লাইড করার দুসাহসীর সংখ্যা হিমালয় পর্বতজয়ী মানুষের তুলনায়ও কম। তবে উড়ুক্কুরা ঠিক তক্কেতক্কে থাকেন সবসময়। সুযোগ পেলেই মেঘের গায়ে টোকা মেরে আসার জন্য।

আর এটা কিন্তু কৃত্রিম মেঘ নয়। আদি-অকৃত্রিম পেঁজা তুলোর মতো নরম মেঘের কথাই বলছি। মর্নিং গ্লোরি ক্লাউডের উৎপত্তি হয় আর্দ্র ও উষ্ণ বাতাসের মিশ্রণের মধ্য দিয়ে। পুরোপুরি সঠিক কারণ না জানলেও আর্দ্র বাতাসটা যে কোরাল সমুদ্রের পূর্বপাশ আর উষ্ণ বাতাসটা যে গালফ অব কার্পেন্টারিয়া থেকে আসে, সেটা সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত সবাই। বিশেষ করে, রাতের বেলা বাতাস ঠান্ডা হয়ে উষ্ণ বাতাসের নিচে চলে যায়। তখন তৈরি হয় এই এক-দুই কিলোমিটার উঁচু ও প্রায় এক হাজার কিলোমিটার লম্বা এই মেঘ টানেলের।

সবসময় অবশ্য একইরকম আদলে আসে না মেঘগুলো। কখনো পাশাপাশি অনেক মেঘের লম্বা লাইন, আবার কখনো একই সঙ্গে মিলে একটা মেঘ—এমন ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা যায় মর্নিং গ্লোরি ক্লাউডকে।

সাধারণত লম্বা পাইপের মতো আকার নিয়ে অনেকটা দূর চলে যায় এ মেঘ। আকাশে তার গতি থাকে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। বেশিরভাগ সময় দক্ষিণ-পূর্ব দিকেই থাকে এ মেঘের মাথা। শুধু পর্যটক নয়, পাইলটদের জন্যই আকাঙ্ক্ষিত এক নাম এ মর্নিং গ্লোরি ক্লাউড। অস্ট্রেলিয়ার বার্কটাউন পাবে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন মেঘ নাবিকের দল। বাতাসটা আর্দ্র হতে শুরু করলেই দ্রুত বাড়ির পথ ধরেন তারা। সকাল সকাল বিমান নিয়ে এসে টুপ করে আকাশে মেঘের কাছে উঠে পড়তে হবে তো!

স্থানীয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে যারা পর্যটকদের মর্নিং গ্লোরি ক্লাউডসে স্কাই ডাইভ ও গ্লাইডিং করার সুযোগ করে দেয়। উত্তর অস্ট্রেলিয়ার গালফ অব কার্পেন্টারিয়ার দক্ষিণ দিকে কুইন্সল্যান্ডের বার্কটাউনে চলে যেতে হবে মেঘের এমন দলা দেখতে। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যেই এমন একটা দারুণ মর্নিং গ্লোরি ক্লাউড দেখতে পাবেন।

অবশ্য একা অস্ট্রেলিয়া নয়, এমন মেঘের টানেল দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংলিশ চ্যানেল, জার্মানি, ব্রাজিল আর পূর্ব রাশিয়াতেও। তবে সেগুলো মর্নিং গ্লোরির কাছে কিছুই না। তাই মেঘের ওপর উঠে তাকে সম্পূর্ণ সৌন্দর্য দিয়ে চোখে ধরতে গেলে অস্ট্রেলিয়ার বার্কটাউনে একবার হলেও ঘুরে কিন্তু আসতেই পারেন!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।