দুই মহানগরীতে ভোট শেষে ফলের অপেক্ষা

খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এবার ফলাফলের অপেক্ষা। সোমবার বেলা চারটায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। ভোট নেওয়া শুরু হয়েছিল সকাল আটটায়।

এদিন সকাল থেকে দুই সিটির কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ভালো ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলনার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কমে। কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে ধীর গতি লক্ষ্য করা গেলে ইসির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক অন্য মেশিন বসিয়ে ভোটগ্রহণ তাৎক্ষণিক চালু করা হয়।

সকাল থেকেই ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয় দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হচ্ছে। আর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন থেকে সিসিটিভিতে দুই মহানগরের ভোট পর্যবেক্ষণ করেছেন ইসি কর্মকর্তার।

তবে হঠাৎ করেই বরিশালে হাতপাখার মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর প্রার্থী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেন।

এছাড়া বরিশালে কিছু কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মেয়র প্রার্থীরা। ভোট শুরুর আগেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া এবং ভোটারদের ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত লাঙল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস।

কিছু কেন্দ্রে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এজেন্টদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন।

এদিকে খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে খুব সুন্দর, সুষ্ঠু এবং অবাধভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।

তিনি বলেন, সিইসিসহ আমরা প্রত্যেকটা সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করছি। সকাল থেকে এতো বেশি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটার উপস্থিতি, যে কল্পনার বাইরে। আমাদের স্বস্তি দিয়েছে এটা যে কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা ভোটারদের আশ্বস্ত করেছে এবং তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

অপরদিকে খুলনা সিটিতে ইভিএমের ধীর গতির কারণে ভোট কিছুটা ধীর গতির হয়েছে। তবে প্রিজাইডিং অফিসাররা বলেছেন, ভোটের গতি ছিল স্বাভাবিক।

খুলনায় ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। তার মধ্যে নতুন ভোটার প্রায় ৪০ হাজার। জয়-পরাজয়ের অন্যতম নির্ধারক তারাই।

তবে, নতুন ভোটার ছাপিয়ে এবার মূল ফ্যাক্টর চিল ‘বিএনপির ভোট’। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা লাখের ওপর ভোট পেয়েছিলেন।

এই সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের শফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকের এসএম সাব্বির হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ালঘড়ি প্রতীকের এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক।

এ ছাড়া ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৬ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে নগরীর ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুই জন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে বরিশালে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী এক লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন।

এই ই নির্বাচনে সাত জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত (নৌকা), জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মুফতি ফয়জুল করিম (হাতপাখা), জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল আহসান (টেবিল ঘড়ি), মো. আলী হোসেন হাওলাদার (হরিণ) এবং মো. আসাদুজ্জামান (হাতি)।

সিটির ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের বিপরীতে ৪২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। নির্বাচনে দুই নারী সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রোজিনা শেখ আয়শা ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদা বেগম। মোট ছয় জন নারী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ মুহূর্তে চার জন তা প্রত্যাহার করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।