সরকারের হাটু কাপা শুরু! চট্রগ্রামে মির্জা ফখরুল



চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমেরিকার স্যাংশনে সরকারের হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। লজ্জায় আমরা মুখ দেখাতে পারি না। স্যাংশন দিয়েছে। আমেরিকা থেকে স্যাংশন। কেন? র‌্যাবকে কারা ব্যবহার করেছে। র‌্যাবকে কারা বলেছে, আমাদের ভাইদের তুলে নিয়ে গুম করতে। সেই সরকার। তারা বলে আমরা ভয় পাই না। ভয় পাই না। এমন ভয় পেয়েছে হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। কারণ তাদের সব কিছুতো বিদেশে। টাকা পাচার করেছে বিদেশে। এইবার যদি তুমি ভোটে আবার কারচুপি করতে যাও, এবার যদি দিনের ভোট রাতে করো। অথবা ওই কুত্তা মার্কা নির্বাচন করো, তাহলে তোমার রেহাই নাই। এইবার রেহাই নাই। আর রেহাই দেওয়া যাবে না।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার কাজির দেউড়িতে ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিভাগের বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সমানে বলেন, এ দেশে নাকি গণতন্ত্র আছে। এ দেশে নাকি সুস্থ ভোট হয়। অনেক হয়েছে, আপনি আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা কোর্টে যেতে পারি না। কোর্টে গেলে, সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মিথ্যা আর গায়েবি মামলা দিয়ে হাজির করা হয়। এরপর হাইকোর্টে যাই, আগাম জামিন নিয়ে নি¤œ আদালতে গেলে আবার জেলে পাঠানো হয়। সেটাই শেষ না, জামিন নিয়ে বের হলে আবার মামলা দেওয়া হয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ক্ষমতায় কীভাবে যাবা? ওই পুলিশ, ওই বিডিআর, অস্ত্র যন্ত্র দিয়ে? আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা জনগণকে ক্ষমতায় আনতে চাই। আমরা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। সাংবাদিকেরা লিখতে পারে না উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, সাংবাদিকেরা লিখলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল আইনে মামলা করা হচ্ছে। রোজিনা ইসলামকে আবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। ফটোগ্রাফার শহিদুল ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। সাংবাদিক সাগর-রুনিকে বাড়ির মধ্যে নির্মমভাবে হত্যার এখনো বিচার হয়নি। 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংগ্রাম করতে হবে, লড়াই করতে হবে। যারা জোর করে প্রতারণা করে, জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। জনগণের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে। এই সরকার প্রধান বলেছিলেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু কই? যুবক ভাইয়েরা বাজারে যেতে পারে না। লবণের দাম বেড়েছে, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। তারা বলে, বাংলাদেশ নাকি ভালো আছে। হুম, তারা ভালো আছে। তারা টাকা পয়সা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এমনকি তাদের সন্তানদেরও বিদেশে পাঠিয়েছে। 

বেগম খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে সন্দেহ করে ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। শুধু আটক করে রাখেনি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগারে অনেক দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। বারবার বলেছি, তাকে মুক্তি দিন। আমরা জানি না, তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা। কারণ তিনি এখন যে অসুস্থ হয়েছেন, এতটা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়। তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।

ফখরুল বলেন, জনগণের টাকা দিয়ে নিজের উন্নয়ন করছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তারা ছাড়া আর কেউ লাভবান হচ্ছে না। আজকে আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আদালতে গিয়ে যে আমরা ন্যায়বিচার পাব, সেই ন্যায়বিচার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। পার্লামেন্টকে শেষ করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে। এই যে মেয়র নির্বাচন হয়েছে। বরিশাল, খুলনায় নির্বাচন হয়েছে। গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের মায়ের কাছে হেরে গেছে। বরিশালের পির সাহেব একজন আলেম মানুষ। তাকে সবাই শ্রদ্ধা করে। শেষ পর্যন্ত তাকেও মেরে রক্তপাত ঘটিয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফখরুল। 

তিনি বলেন, যে বাংলাদেশকে বলা উন্নয়নের রুল মডেল যে বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে এখন মরীচীকা। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা ছাড়া আর কেউ লাভবান হচ্ছে না। চরমোনাই পীর আলেম মানুষ। তার গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। মেরে রক্ত বের করে দিয়েছে। খালেদা জিয়া এখন জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। আমাদের ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সে দেশে গণতন্ত্র থাকতে পারে না।  

তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের নেতা-কর্মীদের আসামী করে শত শত মামলা করেছে। সেসব মামলায় আমরা জামিন নিতে আদালতে যেতে পারি না। হাইকোর্টে জামিন পাওয়ার পর, আমরা নি¤œ আদালতে গেলে নি¤œ আদালত আমাদের লোকদের জেলে পাঠায়। তারা ভীতু। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা বিএনপির বিরুদ্ধে পুলিশ, বিজিবি ও প্রশাসনকে ব্যবহার করছে।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল উন্নয়ন কাজের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সত্যি যে এটি দেশের প্রথম টানেল। কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদার কী হবে? টানেলের আগে যুবকদের চাকরির বাজার নিশ্চিত করতে হবে, জীবনধারণের অধিকার ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।  

আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি  সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে বিএনপির স্থানী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহাজাহান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, সাংগঠনিক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।