বেতাগী মৎস অফিসে হরিলুট!

স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা)ঃ মোরা হুনছি সরকার গরু দেছে ২৫ হাজার টাহার। তয় তারা যে বাছুর মোগো দেছে, তার দাম ১০-১২ হাজার টাহা। আর ছাগলের ঘর, খাবার ভূষি, খৈল যা দেওয়া অইছে তা একছের খারাপ। ভাই ভালো কইরা ল্যাহেন, মোগো সব টাহা লুটপাট কইরা খায় মৎস্য অফিস।

এই কথাগুলো বলছিলেন বেতাগী সদর ইউনিয়নের মাসুম খান। এই জেলে একটা ছাগল পেয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ছাগল ক্রয় বাবদ ১২০ জন জেলের অনুকূলে প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে ছাগলপ্রতি ক্রয়ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার টাকা।

এতে মোট সাত লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করেছে সংশ্লিষ্টরা। গরু ও ছাগল ক্রয় এবং আনুষঙ্গিক খরচের অর্ধেক টাকাই মৎষ্য কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীর পকেটে চলে যায়, এমন অভিযোগ সুবিধাভোগী ও বঞ্চিতদের। এ উপজেলায় তিন হাজার ৩৫০ জন জেলে রয়েছেন। অথচ এদের মধ্যে থেকে মাত্র ২৫ জন জেলেকে বকনা বাছুর এবং ১২০ জন জেলেকে ছাগল বিতরণ করা হয়।
এ বিষয় কথা হয় ছাগল বিতরণের ঠিকাদার শিবু শীলের সাথে।

তিনি বলেন, আমি অভ্যন্তরীন সব বিষয়ে বলতে পারবো না। আমাকে মৎস্য অফিস থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আমি সে অনুসারে কাজ করি। এরচেয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না। অনেক সময় বরাদ্দ কি আছে, এটাও ভালোভাবে জানা যায় না। অফিস থেকে বিল কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইলিশের প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বাড়াতে নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতিটি জেলে পরিবারকে প্রণোদনা হিসেবে মৎস্য বিভাগ জেলেদের মাঝে বিনামূল্যে বাছুর বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিটি গরুর জন্য সরকারি বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার টাকা। জেলেদের গরু বিতরণে ব্যাপক অনিয়মে পাওয়া গেছে। এই উপজেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বকনা বাছুর ক্রয়বাবদ ২৫ হাজার টাকা এবং এদের খাবার ভূষি, খৈল ও চিকিৎসা খরচসহ আরো ১৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এতে ২৫টি বাছুরের বিপরীততে ৪০ হাজার টাকা করে এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২৫ জনকে দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পাঁচজন জেলে বাছুর পেয়েছেন। প্রতিটি বাছুর ক্রয় ও আনুষঙ্গিক মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ সুবিধাভোগীদের। ভুক্তভোগীরা বলেন, প্রতিটি বাছুর রোগাক্রান্ত ও হাড্ডিসার।

বাছুর বুঝে পেয়েছেন এমন একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমাদের নাম লিখবেন না, কারণ তাহলে কিছু খৈল ও ভূষিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবো।

সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী মো. খলিলুর রহমান প্রতিটি গরু ও ছাগল দেওয়ার বিনিময়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অফিস সহকারী মো. খলিলুর রহমান বলেন, গরু ক্রয় ও তার আনুষঙ্গিক খাবার সরবরাহের ঠিকাদার ঢাকা থেকে মৎস্য বিভাগ ঠিক করে দিয়েছে। ছাগলের ঠিকাদার স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের গরু-ছাগল দিতে পারবো না, তারাই এসব অভিযোগ করেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহাকে গত তিন অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয় মুঠোফোনে বলেন, প্রকল্পের নিয়ম ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত জেলে যারা রয়েছে, যাদের জেলে কার্ড আছে, তাদেরকেই গরু-ছাগল দেওয়া হয়েছে। সরকারি নিয়মানুসারে সকল কাজ করেছি।

তথ্য সংগ্রহের জন্য গত তিন দিন ধরে বরগুনার বেতাগী মৎস্য কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসে গিয়ে দেখা যায় তালা ঝুলছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।