যে গবেষণায় এসেছে এশিয়া সেরার সাফল্য

১০০ বিজ্ঞানীর মধ্যে স্থান পাওয়া দুই বাঙালি বিজ্ঞানীই নারী। এই তালিকায় স্থান পাওয়া সেঁজুতি সাহা মনে করেন, এই অর্জনের ফলে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নারীরা বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে এগিয়ে যাচ্ছেন– সেই বার্তা পৌঁছে যাবে বিশ্বের কাছে। তবে ভালো লাগার পাশাপাশি কিছুটা ভয়ও লাগছে সেঁজুতির। তাঁর মতে, ‘এতে দায়িত্ব আরও অনেক বেড়ে গেল। তবে আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশকে। কারণ, এই স্বীকৃতিটাও এশিয়াভিত্তিক। বাংলাদেশে ফিরে না এলে এটা সম্ভব হতো না।’বাংলাদেশ থেকে ও লেভেল শেষ করে ২০০৫ সালে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন সেঁজুতি। জৈবরসায়নে স্নাতক শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আণবিক জিনতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে উচ্চশিক্ষা শেষে তিনি বাংলাদেশের সিএইচআরএফ ছাড়াও কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে কর্মরত আছেন সিএইচআরএফ-এ বিজ্ঞানী হিসেবে। এছাড়াও প্রিন্সটনের একটি গবেষণা সংস্থায় অণুজীববিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাজধানী ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেঁজুতি সাহার বাবা ড. সমীর সাহা বাংলাদেশের আরেক প্রসিদ্ধ অণুজীববিজ্ঞানী ও মা ড. সেতারুন্নাহার গণস্বাস্থ্যের গবেষক।

EN

যে গবেষণায় এসেছে এশিয়া সেরার সাফল্য

প্রকাশ: ১৮ জুন ২৩ । ০০:০০ । প্রিন্ট সংস্করণ

এশিয়ান সায়েন্টিস্ট। সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী। ২৯ মে অষ্টমবারের মতো এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ২০২৩ সালের সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করে। এতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখায় উঠে আসে আমাদের গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী ও সেঁজুতি সাহার নাম। এই দুই স্বপ্নজয়ীর আবিষ্কারের কথা তুলে এনেছেন রাফসান রোহান

১০০ বিজ্ঞানীর মধ্যে স্থান পাওয়া দুই বাঙালি বিজ্ঞানীই নারী। এই তালিকায় স্থান পাওয়া সেঁজুতি সাহা মনে করেন, এই অর্জনের ফলে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নারীরা বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে এগিয়ে যাচ্ছেন– সেই বার্তা পৌঁছে যাবে বিশ্বের কাছে। তবে ভালো লাগার পাশাপাশি কিছুটা ভয়ও লাগছে সেঁজুতির। তাঁর মতে, ‘এতে দায়িত্ব আরও অনেক বেড়ে গেল। তবে আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশকে। কারণ, এই স্বীকৃতিটাও এশিয়াভিত্তিক। বাংলাদেশে ফিরে না এলে এটা সম্ভব হতো না।’

বিশ্বের কাছে বার্তা

বাংলাদেশ থেকে ও লেভেল শেষ করে ২০০৫ সালে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন সেঁজুতি। জৈবরসায়নে স্নাতক শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আণবিক জিনতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে উচ্চশিক্ষা শেষে তিনি বাংলাদেশের সিএইচআরএফ ছাড়াও কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে কর্মরত আছেন সিএইচআরএফ-এ বিজ্ঞানী হিসেবে। এছাড়াও প্রিন্সটনের একটি গবেষণা সংস্থায় অণুজীববিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাজধানী ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেঁজুতি সাহার বাবা ড. সমীর সাহা বাংলাদেশের আরেক প্রসিদ্ধ অণুজীববিজ্ঞানী ও মা ড. সেতারুন্নাহার গণস্বাস্থ্যের গবেষক।

একটু পেছনে ফিরে…

ফলো করুন-
অন্যদিকে তালিকায় জায়গা করে নেওয়া অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা কাজ করছেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা সিএইচআরএফ’-এর পরিচালক হিসেবে। যেখানে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ কাজ ছিল শিশুদের ঘিরে। সেঁজুতি সাহা বিশ্বে প্রথম প্রমাণ করেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শুধু রক্তে নয়, শিশুর মস্তিষ্কেও বিস্তার লাভ করতে পারে, এবং এর ফলে মেনিনজাইটিসও হতে পারে, যা মস্তিষ্কপর্দার প্রদাহ মস্তিষ্ক বা সুষুম্নাকাণ্ডের আবরণকারী পর্দা প্রদাহজনিত একটি রোগ। বর্তমানে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রায় সব ধরনের জেনেটিক টেস্টিং বা জিনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা স্বল্প খরচে পৌঁছে দিতে কাজ করছেন এই মেধাবী নারী গবেষক। এরকম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গবেষণাগার গড়ে তোলা তাঁর স্বপ্ন, যেন সব ধরনের মানুষ এসব সেবা নিতে পারেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কোনো নমুনা আর কখনও দেশের বাইরে পাঠাতে না হয়। লাইফ সায়েন্সে অবদানের জন্য এবার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর তালিকাভুক্ত হলেন তিনি। সেঁজুতি সাহা ও সিএইচআরএফ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের রোগীদের মধ্য থেকে পাওয়া নমুনা থেকে নতুন করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস উন্মোচন করেছেন।

সেঁজুতি সাহা ও চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, বিজ্ঞানী গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী গবেষণা করেছেন প্লাস্টিক দূষণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে। প্রায় ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিপন্ন জলাশয় ও প্রাণিকুল নিয়ে গবেষণা করে আসছেন তিনি। দেশের জলজ প্রতিবেশ এবং বিপন্ন প্রাণী সুরক্ষায় অবদানের জন্য ২০২২ সালে পান ওডব্লিউএসডি-এলসিভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ডও। ২০১৩ সাল থেকে দেওয়া ওডব্লিউএসডি-এলসিভিয়ার ফাউন্ডেশন স্বীকৃতি মূলত দেওয়া হয় উন্নয়নশীল দেশের নারী বিজ্ঞানীদের ঘিরে। বাংলাদেশের জলজ প্রতিবেশ, তথা নদী-নালা ও অন্যান্য জলাধারে প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকি এবং ওই সমস্যা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েই চলছে ওয়াহিদুন্নেসার কর্মজীবন। পাশাপাশি উপকূলীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্যও আছে তাঁর নানান উদ্যোগের গল্প। নানান ধরনের পরিত্যক্ত ও মাছ ধরার নষ্ট জাল থেকে কার্পেট কিংবা ব্যতিক্রমী বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করে আসছেন, যার ফলাফল জলজ পরিবেশের দূষণ হ্রাস। জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশেরও সদস্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করা এই মেধাবী নারীবিজ্ঞানী। এমন অর্জন সম্পর্কে এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘আসলে এই স্বীকৃতির মাধ্যমে নতুন দায়িত্ববোধ তৈরি হলো। আমি এ তালিকায় স্থান পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি। নারীরা যেকোনো কাজে বেশি মনোযোগী হন। তাঁরা দায়িত্ব পালনে অনেক বেশি সচেষ্ট থাকেন। তাঁরা যদি ভালো সুযোগ পান, তাহলে তাঁদের দিয়ে অনেক বড় অর্জন সম্ভব।’

গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী ও তাঁর গবেষণা

এশিয়ান সায়েন্টিস্ট সাময়িকীটির তালিকায় স্থানপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে লেখা হয়েছে–একাডেমিয়া কিংবা ইন্ডাস্ট্রি; দুই ক্ষেত্রের অন্তত একটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন– এমন বিজ্ঞানীদের নামই এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। ২০২২ সালে গবেষণার জন্য যাঁরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁরাও জায়গা করে নিয়েছেন এ তালিকায়। এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় আরও জায়গা পেয়েছেন চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মেধাবী বিজ্ঞানীরা।

তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন আরও যাঁরা

সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী এশিয়ান সায়েন্টিস্ট। সাময়িকীটি ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করে আসছে। সম্প্রতি অষ্টম বারের মতো প্রকাশিত হয়েছে মেধাবী বিজ্ঞানীদের নিয়ে তৈরি এই তালিকা। ২০২৩ সালের তালিকায় উঠে এসেছেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীরা। যেখানে স্থান পেয়েছেন জিনতত্ত্ব, ভূতাত্ত্বিক গঠন থেকে শুরু করে মহাকাশ বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীরা। সেরাদের এই তালিকায় জায়গা করে নেওয়া বিজ্ঞানী গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী গবেষণা করেছেন প্লাস্টিক দূষণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে। অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা কাজ করছেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর পরিচালক হিসেবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।