আ’লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগনের ভোট হবে না —–মির্জা ফখরুল

গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় একটি হোটেলে বিএনপির মিডিয়া সেলের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ভোট হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির মিডিয়া সেলের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, অবৈধ সরকার আবারও ওইভাবে নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। আমরা জনগণের পক্ষ থেকে শুধু এটুকু বলতে চাই, আমাদের জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। আমরা দেখেছি, এটা কখনই সম্ভব না যদি বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে। সেই কারণে বলেছি, আমরা একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। যেন সেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের যারা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, যারা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আজকে আমাদের সঙ্গে এক সাথে হয়েছে। আমরা যুগপৎ আন্দোলন করছি। আমাদের লক্ষ্য একটিই, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চাই, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই, মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এখানে বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে চাই একথাটা কখনোই মূখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে, মানুষের অধিকারকে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেটা ১৯৭১ সালে যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম জনগনের সঙ্গে। আজকে সেজন্য এই মিডিয়া সেলের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমাদের মেইন স্ট্রিম মিডিয়া তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না-এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ যে, এদেশে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন কৌশলে। 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন মিডিয়া, সংবাদপত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া, সাংবাদিক নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদিকদের কারাগারে প্রেরণ, সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত না হওয়াসহ সরকারের বিভিন্ন নির্বতনমূলক ততপরতা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে যে চেতনা ও আশা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, সেখানে মুক্ত গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু বর্তমান শাসকগোষ্ঠী জোর করে ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকটা গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে মিডিয়া কথা বলছে তাদেরই টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, সত্য কথা বলার জন্য, সরকারবিরোধী মত প্রকাশ করায় অনেকে আজ চাকরিচ্যুত হয়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন,সরকার ১০ বছর ধরে বিভিন্ন কায়দায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ২৭ দফা ঘোষণা করেছি।

রাজধানীর একটি হোটেল বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সেলের একবছরের কার্যক্রম নিয়ে তথ্য চিত্র তুলে ধরা হয়।

মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, ফরহাদ হালিম ডোনার, আবদুল হাই শিকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মিডিয়া সেলের শাম্মী আখতার, মোর্শেদ হাসান খান, রুমিন ফারহানা, কাদের গনি চৌধুরী, ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, মীর মোহাম্মদ হেলাল, মওদুদ হোসেন আলমগীর, আলী মাহমুদ, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিউনের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদ সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানী, ডেনমার্টসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকও অংশগ্রহণ করেন। 

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বিএনপির চলমান গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতেই মিডিয়া সেল তৈরি করা হয়েছিল। এ মিডিয়া সেল কেবল প্রচার-প্রচারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। মিডিয়া সেল প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপার্সনের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।