চায়ের দেশে পর্যটক নেই

পর্যটন অধ্যুষিত সবুজের সমারোহে পরিপূর্ণ চায়ের দেশ মৌলভীবাজার। এখানকার বহু দর্শনীয় স্থানসহ সব প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রে সারা বছরই ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটকরা। অন্য সময় কোনো উৎসব বা দীর্ঘ ছুটিতে রীতিমতো ঢল নামে পর্যটকদের। তবে এবার চায়ের দেশে সেইসব পর্যটকের নেই আশানুরূপ সাড়া। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পর্যটক ঘোরাফেরা করছেন। এ সংখ্যা খুবই কম এবং অধিকাংশই স্থানীয়।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার ফলে আশানুরূপ সাড়া নেই পর্যটকদের। এবার প্রথমে প্রচণ্ড তাপদাহ পরে অতিবৃষ্টির কারণে পর্যটকরা বেড়াতে আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এ ছাড়া ভ্রমণপিপাসুদের আর্থিক সংকটও একটা কারণ।

মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে দেখা যায়, ঈদের দিন লাউয়াছড়া, হাওর এলাকা ও শ্রীমঙ্গলের কয়েকটি চা-বাগানসহ জেলার পর্যটন স্থানগুলোতে অল্পসংখ্যক স্থানীয় দর্শনার্থী।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে স্থানীয় কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের ছুটিতে জেলার বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি থাকায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে। তাই জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে এবার ঘুরবেন তারা।

কমলগঞ্জ এলাকায় কথা হয় জেলা শহর থেকে আসা পর্যটক উম্মে হাবিবার সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টিভেজা চা বাগানের পাহাড় টিলা দেখতে অনেকটা মুগ্ধকর ছিল। চা বাগানের পাশে বয়ে যাওয়া লেকের সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে। এ ছাড়া নান্দনিক ইকো রিসোর্ট ঘুরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছি।

লাউয়াছড়া পুঞ্জীর বাসিন্দা সাজু মারছিয়াং বলেন, অন্য সময় ঈদের মৌসুমে লাউয়াছড়ায় প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দুই হাজার পর্যটক আসেন। এবার সে তুলনায় এই সংখ্যা খুবই কম।

রিসোর্টের মালিক সজল দাশ বলেন, শহর ও শহরের আশপাশের হোটেল, রিসোর্টগুলো অধিকাংশ ফাঁকা পড়ে আছে। আমরা ঈদের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু অন্য বছর ঈদের ১০ দিন আগে থেকেই রুম বুকিং হয়ে যায়। এবার আশানুরূপ বুকিং আসেনি।

লাউয়াছড়া টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা শাহীন মাহমুদ বলেন, অন্য বছরের তুলনায় ঈদের এই দুই দিন লাউয়াছড়ায় পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। অন্য সময় যেভাবে ভিড় থাকে, এবার সেই ভিড় নেই। যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা বেশি।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক প্রবাল সিনহা বলেন, লাউয়াছড়ায় সাধারণ সময়ে যে ভিড় থাকে ঈদের ছুটিতে এই দুদিন ভিড় নেই বললেই চলে। রাস্তাও ফাঁকা। দু-এক দিনের মধ্যে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মানজুর আহমেদ মান্না বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে মৌলভীবাজার জেলায় পর্যটক কম এসেছেন।

লাউয়াছড়া সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানে পর্যটকশূন্যকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষকরা। তারা মনে করেন সংরক্ষিত বনে পর্যটকের উপস্থিতি কম মানে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কম হবে। বনের বাসিন্দা পশুপাখি কম উত্ত্যক্ত হবে। তারা ভালো থাকবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।