সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ গাড়ি কেনা মানা

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব রয়েছে দেশেও। এ অবস্থায় সরকারের ব্যয়ের খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের প্রক্রিয়া চলতি অর্থবছরও অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে নতুন অর্থবছর শুরুর দ্বিতীয় দিনেই পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

এই পরিপত্র অনুযায়ী, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারিভাবে সব ধরনের গাড়ি, বিমান ও জাহাজ কেনাকাটা বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করা যাবে। এ ছাড়া সব ধরনের আবাসিক, অনাবাসিক, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ খরচও বন্ধ থাকবে। সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, কর্মশালা, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং ভূমি খাতের অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ অর্থ খরচ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে। এতে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কতিপয় খাতে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ে সরকারের এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়।

সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সরকারি ব্যয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাত থেকে সাশ্রয় হয়েছে ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া, পণ্য ও সেবাসহ পূর্ত কাজ এবং শেয়ার ও ইকুইটিতে বিনিয়োগের লাগাম টেনে সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের উপসচিব আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এ পরিপত্রে বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এ জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কতিপয় খাতে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই পরিপত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দ অর্থের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সাশ্রয়ের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অর্থাৎ বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ৭৫ এবং জ্বালানি খাতের বরাদ্দে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ খরচ করতে বলা হয়েছে। একইভাবে নতুন নির্দেশনায় সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, কর্মশালা, সেমিনার বন্ধ রাখার নির্দেশ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কোনো বিদেশ ভ্রমণ কর্তৃপক্ষের অত্যাবশ্যকীয় বিবেচিত হলে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে করা যাবে। অনুরূপভাবে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারশিপ, ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়ন করা যাবে। বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণ ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণ; এবং সরবরাহকারী, ঠিকাদার, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তারা সেবা, পণ্যের গুণমান নিরীক্ষা, পরিদর্শন খাতে সীমিত ভ্রমণ করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।