প্রধানমন্ত্রীর হাতে জাহাঙ্গীরকে তুলে দিলেন মা জায়েদা

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছেন তার মা নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন। গতকাল সোমবার নতুন মেয়রদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেয়ে জায়েদা খাতুন বলেন, ‘এই ছেলের সব দায়-দায়িত্ব এখন থেকে আপনার। আমি আমার ছেলেকে আপনার হাতে সমর্পণ করলাম।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জায়েদা খাতুন। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এরপরই জায়েদা বেগম প্রধানমন্ত্রীকে ওই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীরের উদ্দেশে বলেন, ‘ভালোমতো কাজ করো।’

শপথ অনুষ্ঠানের পুরো সময় মায়ের পাশে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। নতুন মেয়রের শপথবাক্য পাঠের সময়ও পাশে বসা ছিলেন তিনি। এর আগে নির্বাচন চলাকালেও জাহাঙ্গীর সবসময় ছায়ার মতো তার মায়ের পাশে থেকেছেন। মনোনয়নপত্র তোলা থেকে শুরু করে প্রচার চালানো ও ভোটে বিজয়ী ঘোষণার আগ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে মায়ের পাশে থেকে কাজ করেছিলেন।

জায়েদা খাতুনের জয়ের পর ছেলে জাহাঙ্গীর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার জয় হয়েছে, পরাজয় হয়েছে ব্যক্তির। আমি মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব।’

দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও বীর শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মেয়র জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর গত বছর তাকে মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৪ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন। রিট বিচারাধীন অবস্থায় গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।

গাজীপুর সিটির গত ২৫ মের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর; কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। পাশাপাশি তার মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায় জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। পরে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পুনরায় বহিষ্কৃত হন। তবে তার মায়ের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

সাধারণ গৃহিণী থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন ৬১ বছর বয়সী জায়েদা খাতুন। তার নির্বাচনী কার্যক্রমে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন জাহাঙ্গীর। তিনি মায়ের পক্ষে দিনরাত প্রচার চালান।

ভোটের প্রচারে জায়েদা খাতুন নিজেকে জাহাঙ্গীরের মা হিসেবেই পরিচয় দেন। ফলে ভোটের লড়াইয়ে কার্যত নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাহাঙ্গীর। নির্বাচনে জায়েদা খাতুন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন। আজমত উল্লা খান ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট পেয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।