চোরের ভয়ে শিকলবন্দি ট্রান্সফরমার

বৃষ্টিস্নাত বিকেলে বিদ্যুতের খুঁটির নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন কয়েকজন। খুঁটিতে থাকা ট্রান্সফরমারের দিকে নজর তাদের। লোহার শিকল পেঁচিয়ে তালাবন্ধ ট্রান্সফরমারটি ঠিক কত দিন চোরের হাত থেকে রক্ষা পাবে, সে শঙ্কার কথাই বলছিলেন তারা। কয়েক দিন আগেই দ্বিতীয়বারের মতো চুরি হয়েছিল ট্রান্সফরমার। এলাকাবাসী ভর্তুকি দিয়ে এটি আবারও কিনেছেন। এবারেই প্রথম নয়, এই এক ট্রান্সফরমারের জন্য তিনবার ভর্তুকি দিতে হয়েছে এলাকার ৮৫ গ্রাহককে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা।

সম্প্রতি ঢাকার ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়নের বালিয়া দক্ষিণপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্যের।

এলাকাবাসী জানান, গত ২২ জুন ভোররাতের দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। সবাই ভেবেছিলেন, স্বাভাবিক লোডশেডিং। কিন্তু কয়েক ঘণ্টায়ও বিদ্যুৎ না এলে ভোরের দিকে দেখা যায়, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমারটি চুরি হয়ে গেছে। নিচে শুধু ট্রান্সফরমারের খালি বাক্স পড়ে আছে। ২০২২ সালের দিকেও একইভাবে একই খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। এর কয়েক বছর আগে একবার ট্রান্সফরমার অকেজো হয়ে পড়েছিল।

তাদের অভিযোগ, কয়েক মাসের মধ্যে দুইবার ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমার অকেজো হওয়ার সময় বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০০ করে টাকা নিয়েছিল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ২০২২ সালের চুরির ঘটনায় ট্রান্সফরমারের অর্ধেক দাম পরিশোধ করতে হয়েছে। সেটি পল্লী বিদ্যুৎ নিয়েছিল বিলের সঙ্গে। ওইবার দিতে হয়েছিল ১ হাজার ১০০ টাকা করে। আর এবার পুরো টাকা নগদ দিতে হয়েছে। ৮৫ জন গ্রাহককে এ জন্য গুনতে হয়েছে প্রতিঘর ২ হাজার ২০০ টাকা করে।

গ্রামের বাসিন্দা ওমর খান বলেন, এই এক ট্রান্সফরমারের জন্য তিনবার ভর্তুকি দিলাম। ফাঁকা জায়গা থেকে ট্রান্সফরমারটি সরানোর জন্য বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সরায়নি। এর মধ্যে কয়েক মাসের ভেতর দুইবার ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটল। আমরা ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারাই তদন্ত করবেন। কিন্তু তাদের তদন্তের কোনো ফল দেখতে পেলাম না।

ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের কেউ জড়িত থাকতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একেকটি ট্রান্সফরমারের ওজন প্রায় আট মণের কাছাকাছি। এই খুঁটিতে উঠে, ট্রান্সফরমার বহন করে নিচে নামানো একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের পক্ষেই সম্ভব। আর এই বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরাই চৌকস।

রাসেল খান নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ট্রান্সফরমারটি চুরি রোধে আমরা পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের বারবার এটিকে ফাঁকা জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা দেয়নি। এই ট্রান্সফরমার আনতে গিয়েও তাদের অসদাচরণের শিকার হতে হয়েছে। এ নিয়ে তিনবার ভর্তুকি গুনতে হলো। এটাও কত দিন থাকবে, জানি না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫০ গজের মধ্যেই বালিয়া খেলার মাঠের পাশে যাওয়া সড়কের পাড়ে একটি খুঁটিতে ট্রান্সফরমারটি রয়েছে। এখান থেকেই চুরির ঘটনা ঘটেছিল। সবশেষ এটির চুরি ঠেকাতে ট্রান্সফরমারটি শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।

বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন, যদিও এলাকায় সেভাবে চুরির ঘটনা নেই। কিন্তু দেড় বছরের মধ্যে আরেকবার ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটল। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখতে হবে।

ধামরাই থানার কাওয়ালীপাড়া বাজার তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) ইন্দ্রজিৎ মল্লিক বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এমন কোনো অভিযোগ ও তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এলাকাকে চুরিমুক্ত করতে চাই।

কুশুরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের ডিজিএম জসীম উদ্দিন বলেন, ট্রান্সফরমার চুরি হলে প্রথমবার গ্রাহকরা অর্ধেক ভর্তুকি দেবেন। আর পরেরবার পুরোটাই দিতে হবে। এটাই নিয়ম। তাই তাদের ওই অর্থ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া কোনো অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।