সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ

সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পবিত্র কোরআন শরিফে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনের রাস্তায় এবং মিরপুরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর ও সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ।

শুক্রবার (০৭ জুলাই) জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে রাজধানীর মিরপুর ১নং গোলচত্বরে এক বিক্ষোভপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, কোরআন শরিফে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমের ঈমান-আকিদা ও বোধ-বিশ্বাসে আঘাত হেনে ধৃষ্টতা প্রদর্শনের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, জামাল উদ্দীন, মু. আতাউর রহমান সরকার ও নাসির উদ্দীন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের শিবির সভাপতি সালাহউদ্দীন, পশ্চিম সভাপতি আসাদুজ্জামান ও ছাত্রনেতা আব্দুর রহীম প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে মাওলানা আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টেকনিক্যাল মোড়ে এসে শেষ হয়। মিছিলে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআন। তাই এই মহাগ্রন্থ আল কোরআনের যে কোনো ধরনের অবমাননা বিশ্ব মুসলিম বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না বরং মুসলিম উম্মাহ এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি সুইডিস সরকারকে অবিলম্বে অপরাধীকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, সুইডেনে দুর্বৃত্তরা পবিত্র কোরআনে অগ্নিসংযোগ করে মুসলমানদের হৃদয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ জেগে উঠেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ সরকার সুইডিস রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়ে দায় শেষ করেছে। মাওলানা আব্দুল হালিম কোরআন অবমাননার ঘটনা জাতীয় সংসদে আলোচনা করে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানান।

তিনি কোরআন অবমাননার ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শরিক হওয়ার জন্য এবং ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব পর্যায়ের ধর্মপ্রাণ মানুষকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে ধন্যবাদও জ্ঞাপন করেন।

এদিকে কোরআন পোড়ানোর অপরাধে সুইডেনকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ।

শুক্রবার (০৭ জুলাই) বাদ জুমা রাজধানীর পুরানা পল্টনে বিক্ষোভ মিছিলে মাওলানা আবু তাহের জিহাদি বলেন, সুইডেনে কোরআন মাজিদ পোড়ানো ও অবমাননা করে চরম বেয়াদবি করেছে। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। জীবন বাজি রেখে হলেও কোরআনের মর্যাদা রক্ষা করতে আমরা সদা প্রস্তুত রয়েছি। সুইডেন যদি এ ঘটনায় ক্ষমা না চায় তাহলে অচিরেই সুইডেন দূতাবাস ঘেরাও করা হবে। বিশ্বের দেশে দেশে যেখানেই কোরআনের বিরুদ্ধে কেউ কটূক্তি করবে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৪৬টি ইসলামী দলের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের উদ্যোগে শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিলটি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল হয়ে কালভার্ট রোডে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে সভাপতিত্ব করেন মজলিসে সাদরাতের সদস্য আল্লামা আবু তাহের জিহাদী।

আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের সমন্বয়ক মুফতি ড. খলিলুর রহমান মাদানী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, আহকামে শরিয়া হেফাজত কমিটির সহসভাপতি ড. মুফতি আবুল ইউছুফ খান, মাওলানা আজীজুর রহমান আজীজ, খেলাফতে রব্বানির মহাসচিব মাওলানা লুৎফর রহমান, ছারসিনার পীর শাহ আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, কওমি মুভমেন্টের মহাসচিব মাওলানা হাফেজ শফিকুল ইসলাম নরসিংদী, মাওলানা ড. আব্দুল মান্নান, মাওলানা আব্দুস সবুর মাতুব্বর প্রমুখ নেতারা।

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দলগুলো হলো- খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদ, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ, জাতীয় ইমাম সমিতি, জাতীয় খতিব পরিষদ, আইম্মা পরিষদ, খেলাফতে রাব্বানী, নাস্তিক মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটি, ইসলামী জনতা বাংলাদেশ, ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ, আহকামে শরিয়াহ হেফাজত কমিটি, জাতীয় সিরাত সা. কমিটি, কোরআন-সুন্নাহ পরিষদ, বাংলাদেশ কোরআন গবেষণা কেন্দ্র, খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশ, তালিমুল কোরআন সংস্থা, উলামায়ে দেওবন্দ পরিষদ, প্রগতিশীল ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ভাসানী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইমাম সমিতি।

ড. মুফতি খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, সুইডেনের স্বঘোষিত নাস্তিক সালওয়ানকে পবিত্র কোরআনে আগুন দেওয়ার ধৃষ্টতার দরুণ সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সুইডেন সরকারকে কঠোর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। মুসলিম বিশ্বকে সুইডেনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অবরোধ আরোপ করতে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে সুইডেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নসহ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।