গণঅধিকারের নুর গ্রুপে কোন্দল চরমে, অনিশ্চিত কাউন্সিল

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গণঅধিকার পরিষদে বিতর্ক যেন পিছুই ছাড়ছে না। গত কিছুদিন ধরে দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া এবং সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের মধ্যে চলছে পালটাপালটি বহিষ্কার যুদ্ধে লিপ্ত। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কথিত এজেন্টের সঙ্গে নুরুল হক নুরের বৈঠকের সূত্র ধরে এই ঝামেলার সূত্রপাত। এরপর চলে পালটাপালটি বহিষ্কার এবং সংবাদ সম্মেলনে বিষোদগার। স্পষ্টত আলাদা দুটি বলয়ে রাজনীতি চলছে রেজা কিবরিয়া এবং নুরের। সেই প্রেক্ষিতে ১০ জুলাই কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করে নুর গ্রুপ। তবে তাদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৪ সদস্যের মধ্যে দুজন গতকাল শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন। একজন নিষ্ক্রিয়। কেবলমাত্র প্রধান নির্বাচন কমিশনার সক্রিয় রয়েছেন।

জানা গেছে, ড. রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন ঘোষণা দিয়ে পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক সদস্য ঘোষিত দলীয় কাউন্সিল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন। অন্যদিকে নুরের পক্ষে থাকা সদস্যরা নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে ঘোষণা দেয় নির্বাচনের। এরই মধ্যে এ নিয়ে নুরের পক্ষের নেতাদের মধ্যে কোন্দলের তথ্য পাওয়া গেছে। নুরের গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বোর্ডের দুই সদস্য পদত্যাগও করেছেন।

সূত্র জানায়, তড়িঘড়ি করে চলতি মাসের ১০ তারিখেই দলের কাউন্সিল ঘোষণা করে নুরপন্থি নির্বাচন বোর্ডের প্রধান আরিফুল ইসলাম। কিন্তু নির্বাচনে কতটি পদে ভোট হবে, তা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় তপশিলের আগেই। দলের গঠনতন্ত্রের ২২ ধারা অনুযায়ী উচ্চতর পরিষদের (মূল নীতিনির্ধারণী কমিটি) ১৩টি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা। দলের বিরোধ সৃষ্টির আগে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে একটি ঐকমত্য ছিল যে এই ১৩টি পদের মধ্যে ৮টিতে সরাসরি নির্বাচন হবে এবং সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে এ আটজন নির্বাচিত হবেন। বাবি ৫টি পদ দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিয়োগ দেবেন। অর্থাৎ এ ৫ জন নির্বাচিত না হয়ে মনোনীত হবেন।

গণঅধিকারের নুরপন্থিদের সূত্র বলছে, উচ্চতর পরিষদের পদ বণ্টন নিয়েই নুরুল হক নুর এবং যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। যেহেতু এখন ভোটারদের বড় অংশ নুরুল হক নুরের অনুসারী এবং রাশেদ খান অনেকটা বন্ধু শূন্য অবস্থায় আছেন, সেহেতু নুরুল হক চাইছেন ১৩টি পদেই নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণ করে নিয়ে আসতে। এতে উচ্চতর পরিষদে তার একচ্ছত্র দখল নিশ্চিত হবে। তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরিফুল ইসলাম। কারণ সব পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচন হলে আরিফুলের পরবর্তিতে পদে থাকার সুযোগ থাকবে না। কারণ নির্বাচকমণ্ডলির প্রধান হিসেবে সরাসরি উচ্চতর পরিষদের সদস্য হওয়ার কথা ছিল আরিফুলের। তাই এমন অবস্থায় তিনি সব পদে নির্বাচন দিতে চাইছেন না। তিনি মনে করছেন, কিছু পদ শূন্য থাকলে পরে সেই শূন্য পদে তাকে উচ্চতর পরিষদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এ দিকে রাশেদ খানও চাইছেন ৮টি পদে নির্বাচন দিয়ে বাকি পদগুলো মনোনয়নের মাধ্যেমে পূরণ করতে। এতে নুরের সঙ্গে রাশেদ ২-১টি পদে তার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দেন দরবারের সুযোগ পাবেন। এসব বিরোধের জেরে এরই মধ্যে গঠিত নির্বাচন বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন বোর্ডের সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ও মাহবুব জনি। ৪ সদস্যের নির্বাচন বোর্ড গঠিত হলেও কার্যত সক্রিয় একজন। অপর এক সদস্য তৌফিক শাহরিয়ার শুরু থেকেই বিরোধ ও ভাঙনের মুখে বিতর্ক এড়াতে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন।

এদিকে কাউন্সিলের মাত্র ২৪ ঘণ্টা বাকি থাকলেও এখনো নেতাকর্মীরা সন্দিহান এই কাউন্সিলর আদৌ হবে কি না। নুরপন্থি অংশের নীতিনির্ধারকরাও নিশ্চিত করতে পারছেন না কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে এখনো কোনো উৎসবের আমেজ তৈরি করতে পারেনি।

এসব বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মাহবুব জনি কালবেলাকে বলেন, আমি এখন আর পরিচালনা বোর্ডে নেই। পদত্যাগ করেছি। নির্বাচন করব।

পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড থেকে কেউ পদত্যাগ করেনি। এটা ভুয়া খবর। আমাদের গঠনতন্ত্রে যেভাবে উল্লেখ রয়েছে, সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গণঅধিকারের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরিফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুসারে দলের ১৩টি পদের সবকটিতে নির্বাচন হবে কি না সেটি আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তপশিলে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দুজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তারা কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন, তারা দলের উচ্চতর পরিষদে নির্বাচন করতে চান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।