বিএনপির ‘জামাকাপড় আনা’ নির্দেশনার রহস্য কী?

সারা দেশে সমাবেশ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কম‍র্সূচি শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের কথা থাকলেও এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার হওয়ার কথা রয়েছে। এই সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির গোপন নির্দেশনা উঠে এসেছে গোয়েন্দা তথ্যে। সেখানে বলা হয়েছে, বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের কাছে বার্তা ছিল—ঢাকায় আসার সময়ে অতিরিক্ত জামাকাপড় নিয়ে আসতে হবে। সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল পুরোনো চাদরও। ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে জেলা ও উপজেলা নেতাদের গোপনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ। ছবি : সৌজন্য

নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ। ছবি : সৌজন্য

সারা দেশে সমাবেশ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কম‍র্সূচি শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের কথা থাকলেও এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার হওয়ার কথা রয়েছে। এই সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির গোপন নির্দেশনা উঠে এসেছে গোয়েন্দা তথ্যে। সেখানে বলা হয়েছে, বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের কাছে বার্তা ছিল—ঢাকায় আসার সময়ে অতিরিক্ত জামাকাপড় নিয়ে আসতে হবে। সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল পুরোনো চাদরও। ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে জেলা ও উপজেলা নেতাদের গোপনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ঢাকায় দীর্ঘ সময় অবস্থানের জন্য জামাকাপড় আনতে বলা হতে পারে। অনেকে বলছেন, ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ পিছিয়ে ২৮ জুলাই হতে পারে, এমন ধারণা আগে থেকেই বিএনপির ছিল। সে জন্য কর্মীদের প্রস্তুত রাখতে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে সবার মনে এসেছে হেফাজতে ইসলামীর ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির কথা।

২০১৩ সালের ৫ মে ফজরের নামাজের পরই ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে নিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ঢাকার উত্তরে গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী এবং দক্ষিণে সায়দাবাদের কাছে কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ তৈরি করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারা দেশ থেকে আসা বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। শাপলা চত্বরের সেই সমাবেশের পর হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচি এবং তারপরে রাতের বেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সেখান থেকে হটিয়ে দেওয়া হলেও এর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের রাজনীতি।

অতিরিক্ত জামাকাপড় ও চাদর নিয়ে ঢাকায় এসে বিএনপি নেতাকর্মীরা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক দখলে নিয়ে দীর্ঘ অবস্থান নিতে পারে বলে শঙ্কা করছে রাজনীতি বিশ্লেষকরা। ঘটনা এমন হলে জনভোগান্তির সৃষ্টি হবে। অবনতি হতে পারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে মনে হয়েছে, সমাবেশ ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় চলে এসেছেন। তারা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ও আবাসিক হোটেলগুলোতে উঠেছেন। কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে, সে বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি মূলত মহাসমাবেশের নামে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের মতো ঢাকার কোনো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখলে নিয়ে কর্মসূচি দীর্ঘস্থায়ী করতে চাচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে। এরপরই মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে। নয়াপল্টন ঘিরে নজরদারি বাড়ানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। ঢাকার আকাশে ড্রোনের টহলও প্রত্যক্ষ করা যায়।

পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সাইবার টহলও জোরদার করা হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে তা অপারেশনাল ইউনিটগুলোকে অবহিত করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।