মাদক সেবীদের পৃষ্ঠপোষক মুরাদ এখন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী


“ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার” বাক্যটি যেন একবারেই পরিপূরক বরগুনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী মুরাদ হোসাইনের জন্য। বরগুনা শহরে তার বৈধ কোন পেশাগত পরিচয় কিংবা বৈধ অর্থের উৎস না থাকলেও বরগুনা জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ব্যানার, পোস্টার, লিফলেটের ফোয়ারা ছড়িয়েছেন তিনি। এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যায় করার উৎস কি তা সকলের কাছেই অধরা। তবে অভিযোগ রয়েছে বরগুনা-০১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথের ছেলে সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ট সহযোগী তিনি। তারা একে অপরের বন্ধুও বটে। বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী নয়ন বন্ডের রাজনৈতিক আশ্রয় দাতাও ছিলো এই মুরাদ হোসাইন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুরাদ হোসাইনের পৈত্রিক নিবাস বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। তার বাবার নাম রতন চৌধুরি। তিনি এক সময়ে তার আপন বড় ভাইয়ের গার্মেন্টস এর দোকানে কর্মচারি হিসেবে কাজ করতেন।

সুত্র বলছে, সাংসদ পুত্র সুনাম দেবনাথের বন্ধু ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা পেশাগত পরিচয় নেই এই মুরাদ হোসাইনের। অভিযোগ রয়েছে এমপি পুত্রের সাথে সখ্যতার বিষয়টিকে পুজি করে কিশোর গ্যাং ও মাদককারবারির সাথে জড়িত রয়েছে এই মুরাদ হোসাইন। এমপি পুত্রের সাথে সখ্যতার বিষয়টি কাজে লাগিয়ে কোন পূর্ব রাজনীতির অভিজ্ঞতা ছাড়াই ২০১৫ সালে বাগিয়ে নেন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ। পদ পদবী থাকলেও তৎকালীন সময় বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দলীয় কর্মসূচিতে তেমন একটা সক্রিয় দেখা যায়নি তাকে। বরং এই পদ পদবী কাজে লাগিয়ে মাদক বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, লবিং তদবির বাণিজ্যসহ কিশোর গ্যাং বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতাও বার বার উঠে এসছে তার নাম। তবে বারবারই সাংসদের ছেলে ও তার পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় সকল অভিযোগ থেকে সটকে পড়তে সক্ষম হন তিনি।

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী নয়ন বন্ড (ক্রস ফায়ারে নিহত) এর সাথে ছিলো তার যোগসাযোশ। অভিযোগ রয়েছে নয়ন বন্ডের রাজনৈতিক হাতে খড়ি হয় এই মুরাদ হোসাইনের হাত ধরে। এরপরই বরগুনায় শুরু হয় কিশোর গ্যাং কালচার। যার মূল পৃষ্ঠপোষকও এই মুরাদ হোসাইন।

নয়ন বন্ডের বন্ধু বান্দব ও তৎকালীন সময় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্ধের দাবি, ২০১১ সালে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরনোর আগেই নয়ন বন্ড ইয়াবা ও হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়েন। তখন মাদকের টাকা জোগাড় করার জন্য মানুষের মুঠোফোন, গয়না ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ছিচকে অপরাধে জড়ান নয়ন বন্ড। ২০১১ সালে ৭ জুলাই নয়নের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি হয়েছিলো এক স্কুলগামী ছাত্রীর গয়না ছিনিয়ে নেওয়া। মাদকের টাকার জন্য নয়নের এমন অপরাধ দিনদিন বাড়তে থাকে ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিণতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা হয়। ভুক্তভোগীরা তখন পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে নয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করেন। নয়নও তখন রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজতে থাকে।

এক পর্যায়ে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মুরাদ হোসাইনের হাত ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন নয়ন বন্ড। এই মুরাদ হোসাইন সাংসদপুত্র সুনাম দেবনাথের অনুসারী। বরগুনা শহরের ডিকেপি রোড এলাকায় নয়ন বন্ডের বাসার পাশেই বটতলা এলাকায় মুরাদ হোসাইনের বাসা। মুরাদ হোসাইনের মাধ্যমে নয়ন বন্ডের পরিচয় ঘটে সাংসদ পুত্র তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. সুনাম দেবনাথের। এরপরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নয়ন বন্ড। সাংসদ পুত্র সুনাম দেবনাথ ও তার অনুসারী মুরাদ হোসাইন এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মাদকের বিনিময়ে রাজনীতির একটি অপসংস্কৃতি চালু হয়। এসব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে মুরাদ হোসাইন। রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব বিষয় উঠে আসলেও অদৃশ্য শক্তির জাদুর কাঠির পরশে মুরাদ হোসাইন বারবারই থেকে গেছেন অধরা।

রিফাত হত্যাকান্ডের পরপরই নয়ন বন্ডের মাদক বানিজ্য ও তার পৃষ্ঠপোষকদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, আমরা সব সময় দেখতাম তারা একসাথে চলে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই নয়ন বন্ডের আধিপত্য ছিলো বরগুনায় অথচ আজ তারাই আবার নয়ন বন্ডের ফাঁসি চাইছে এটা সত্যিই হাস্যকর।

তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান যুগ্নসাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেছিলেন, কোন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় ছাড়া এভাবে কিশোর গ্যাং তৈরি হতে পারে না। একই সাথে মাদকের বিনিময়ে যে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের রাজনীতি শুরু হয়েছে আগামী দিনের জন্য এটা খুবই ভয়ংকর। তাই আমাদের সকলের উচিৎ মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাং এর গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।

এবিষয়ে মুরাদ হোসাইন এর ডিকেপি রোডের বাসায় গিয়ে সরাসরি তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।