তিন বছরের কারাদণ্ডইমরান খানকে ছাড়াই ক্ষমতায় যাচ্ছে তার দল?

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার এবং তার উপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইমরান খানের তাৎক্ষণিক অনুপস্থিতিতে দলটি একটি সংকটময় মোড়ে দাড়িয়ে আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানের রাজনৈতিক দল ‘পিটিআিই’ কে এখন দলের সকল শক্তিগুলিকে একত্রিত করে তার উপর শক্ত করে দাড়াতে হবে।

পাকিস্তানের জনগন যখন গভীর অনিশ্চয়তার জলে আটকে রয়েছেন তখন এমন একটি নেতৃত্ব দরকার যা তাদেরকে আশার আলো দেখাবে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে গতিশীলতা আগামীর পাকিস্তানের রাজনৈতিক গতিপথকে রূপ নির্দেশ করবে।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান পিটিআই-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে ডব্লিউআইওএন-কে বলেন, পাকিস্তানের বৃহত্তর রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে পার্টির অভ্যন্তরীণ গতিশীলতাই একমাত্র পিটিআই-কে টিকিয়ে রাখতে পারে।

কুগেলম্যান বলেন, ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্য থেকে সরে যাওয়ার পর পিটিআই একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। পিটিআই দলটি ফাঁকা হয়ে গেছে এবং দৃশ্যপট থেকে ইমরান খান সরে যাওয়ার পর দলটি নেতৃত্বশুন্য হয়ে গেছে।

উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক আরও বলেন, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলটির জনসমর্থন এখনও তুঙ্গে এবং পাকিস্তান জনগণের মধ্যে এখনও ব্যাপক ক্ষমতাবিরোধী মনোভাব রয়েছে। পিটিআই যদি এই জনসমর্থন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে তবে এখনও তারা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারে এবং তিন মাস পর হতে যাওয়া পাকিস্তানের আগামী নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, ইমরান খানের অনুপস্থিতিতেও দলটি আগামী নির্বাচনী জয়লাভ করতে পারে, যদি “পিটিআই-এর অবশিষ্ট নেতৃত্ব দেশটির সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম হয়।”

দলটির বর্তমান নেতা, শাহ মেহমুদ কুরেশির সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার রেকর্ড রয়েছে। তাই দল হিসেবে পিটিআইকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত তারা পাকিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।

পিটিআই শেষ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মনোবল এখন চাঙ্গা। তারা ইমরান খানের জনসমর্থন, পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এবং বর্তমান ক্ষমতাসীনদের উপর জনমানুষের ক্ষোভ এই সকল বিষয়গুলোকে বজায় রাখতে এবং তা কাজে লাগাতে চাইবে। একইসাথে তারা ইমরান খানকে কারাগার থেকে মুক্তির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পিটিআই-এর সবচেয়ে বড় শক্তি ইমরান খানের ব্যক্তিত্ব। পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইমরান খান মানুষকে যেভাবে প্রভাবিত করেছেন তাতে পিটিআই দুর্বল হয়ে গেলেও, এটি রাষ্ট্র এবং বিশেষ করে সেনাবাহিনীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। পিটিআই-এর বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান সমর্থন সেনাবাহিনী বিরোধী মনোভাব পোষণ করে। পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ দেশটিতে সরকারের উপর সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বে ক্ষিপ্ত। এবং এই মুহুর্তে মানুষের সেনাবাহিনী বিরোধী এই মনোভাব কমানোর কোন উপায় নেই।

মানুষ কোনভাবেই পাকিস্তানের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বা পিটিআইয়ের নেতাদের নিয়ে গঠিত আরেকটি নতুন দলকে ভোট দেবেনা। মানুষ শুধু ইমরান খান কে চায়।

বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইমরান খানের অনুপস্থিতি দলের জন্য অস্তিত্বগত ক্ষতি। ইমরান খানকে ঘিরেই যেমন পিটিআই এর অস্তিত্ব, তেমনি পিটিআইকে ঘিরেই ইমরান খান।

কুগেলম্যান পাকিস্তানের বৃহত্তর রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপের উপর একটি সংক্ষিপ্ত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি এমন একটি অবস্থার কথা কল্পনা করেন যেটার নাম হবে, ” সংকট থেকে স্থিতাবস্থার রাজনীতির”।

পিটিআই-এর সেনাবাহিনী-বিরোধী মনোভাব পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে রক্ষণাত্মক অবস্থানে রেখেছে, অন্তত এজন্য ইমরান খানের ধন্যবাদ প্রাপ্য বলে মনে করেন কুগেলম্যান। হাইব্রিড বিন্যাসে বেসামরিক এবং সামরিক নেতারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করবে এমন কোন মডেল পাকিস্তানের মানুষ আর চায়না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।