শর্ত মেনে কোথাও যাবেন না খালেদা জিয়াবিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া কোনো শর্ত মেনে কোথাও যাবেন না। ম্যাডাম বলেছেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই। গতকাল বুধবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক পেশাজীবী কনভেনশনে দলীয় চেয়ারপারসনের এ বার্তার কথা জানান মির্জা ফখরুল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে কী শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তা জানাননি বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এখন মৃত্যুশয্যায় বলা যেতে পারে। তিনি লড়াই করছেন মৃত্যুর সঙ্গে, জীবনের লড়াই করছেন। এ অবস্থায়ও তিনি পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই। কোনো শর্ত মেনে তিনি কোথাও যাবেন না। তৎকালীন বেআইনি সরকারের লোকজন (১/১১) বলেছিল—বিদেশে চলে যাও। তিনি তখন বলেছেন, এই দেশ ছাড়া কোথাও তার জায়গা নেই। তখন কিন্তু অন্যরা বিদেশে চলে গিয়েছিলেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন—আমি নাকি ভুল বলেছি, মিথ্যাচার করেছি। এখানে আইনজীবীরা আছেন—৪০১ ধারায় পরিষ্কার করে বলা আছে, সরকারের ক্ষমতা আছে শাস্তি মওকুফ করে দেওয়ার, মাফ করে দেওয়ার। তার ক্ষমতা আছে সাময়িকভাবে স্থগিত করার, দণ্ড মাফ করে দিয়ে তাকে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার। অথচ বেমালুম বলে যাচ্ছেন, কোনো সুযোগ নেই—তাকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এ ধরনের কথাবার্তা বলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে আপনারা হত্যা করতে চান। সেজন্য আজকে এ ধরনের কথা বলছেন।

লন্ডনে এক নাগরিক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, সেজন্য জনগণ নিকৃষ্টতম ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তলে তলে আপস হয়ে গেছে—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে তারা (সরকার) এত বেশি ভীত হয়েছে, এত বেশি পাজলড হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন যে, ভয় নাই ভয় নাই—তলে তলে আপস হয়ে গেছে। তাহলে স্বীকার করলেন, এখন পর্যন্ত ভয়ে ছিলেন, আপস হয়েছে কি হয়নি সেটা স্বীকার করলেন। আপনাদের মতো মিথ্যা কথা পৃথিবীতে আর কেউ বলে না। মির্জা ফখরুল বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন—দিল্লি আছে, আমরাও আছি। প্রশ্নটা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে কী বলতে চেয়েছেন? দিল্লি কি বলেছে, বাংলাদেশে জোর করে নির্বাচন ঘোষণা করো। পরিষ্কার করে বলুন।

একদফার চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই বছর ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছি। ২২ জনের প্রাণ গেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মানে এই নয় যে, কেউ আঘাত করলে তার প্রত্যাঘাত করব না। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য—আন্দোলনের মাধ্যমে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের তৎপরতার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই। আগে পদত্যাগ করো, সংসদ বাতিল করো, নির্দলীয় সরকার গঠন করো। তারপরে নির্বাচন হবে, তার আগে নয়।

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদের যৌথ উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে এই পেশাজীবী কনভেনশন হয়। এতে সারা দেশ থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার দেড় সহস্রাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে এবং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, কামরুল ইসলাম সজল, আব্দুস সালাম ও শামীমুর রহমান শামীমের যৌথ সঞ্চালনায় কনভেনশনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, কবি আবদুল হাই শিকদার, অধ্যাপক ডা. গাজী আবদুল হক, অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হক, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, রাশেদুল হাসান হারুন, রুহুল আমিন গাজী, এম আবদুল্লাহ, শহীদুল ইসলাম, জাকির হোসেনসহ বিভিন্ন পেশার নেতারা বক্তব্য দেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদও বক্তব্য দেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।