বরিশালেও ‘টেবিলঘড়ি’ নিয়ে চিন্তিত নৌকা

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুনের প্রতীক ছিল টেবিলঘড়ি। অনেকটা আলোচনার বাইরে থেকে এসে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘টেবিলঘড়ি’। এই প্রতীক নিয়ে বরিশালে ভোট করছেন বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান।

বরিশাল সিটি নির্বাচনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা, রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি ও সাধারণ ভোটারদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তাদের মতে, প্রচারে গাজীপুরের জায়েদা খাতুনের মতোই পরিস্থিতি স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসানের। নৌকা ও হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীর চেয়ে প্রচারে অনেকটাই পিছিয়ে। কিন্তু অধিকাংশ ওয়ার্ডে বিএনপি-জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বিএনপির সমর্থক ভোটারদের সহানুভূতি পেতে পারেন। এই বিষয়টি ভাবনায় ফেলেছে আওয়ামী লীগকে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীন বলেন, শুরুতে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছিল। এখন সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন।

কামরুল বর্তমানে দলীয় কোনো পদে না থাকলেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। তিনি বরিশালের বিএনপি দলীয় প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে।

আহসান হাবিব কামাল গত বছর মারা যান। তিনি বরিশাল নগর বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বরিশাল পৌরসভার মেয়র ছিলেন। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন আহসান হাবিব কামাল।

নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শুরুতে কামরুলকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা ছিল না। ভোটের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কামরুলই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় উঠে আসছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষকেরা। ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন।

এর আগে গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে মেয়র পদে জয়ী হন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে মেয়র পদে প্রার্থী হলেও যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তবে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়। জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এমন পটভূমিতে টেবিলঘড়ি মার্কার প্রার্থী জায়েদা খাতুন ভোটারদের সহানুভূতি পেয়ে ভোটের দিন বাজিমাত করেন বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় ১৯ জন বর্তমান ও সাবেক নেতাকে গত শনিবার আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এই ১৯ জনের মধ্যে মেয়র পদপ্রার্থী কামরুল আহসানও রয়েছেন। যদিও বিএনপিতে তিনি বিএনপিতে কোনো পদে ছিলেন না।

তবে বরিশাল বিএনপি সূত্রে জানা যায়, কামরুল দলের নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না। বরিশাল বিএনপির প্রভাবশালী একজন নেতা কামরুলকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। বরিশাল মহানগরের প্রায় সব ওয়ার্ডেই এই নেতার নিজস্ব লোকবল রয়েছে।

টেবিলঘড়ি প্রতীক স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী কামরুল আহসানের জন্য আবেগেরও। তিনি জানান, তাঁর বাবা আহসান হাবিব এই প্রতীক নিয়েই বরিশাল পৌরসভার মেয়র হয়েছিলেন। কামরুল বলেন, ‘দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তবে যেহেতু দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না, তাই কেউ প্রকাশ্যে আমার নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না। সুষ্ঠু ভোট হলে ফলাফলেই জনগণের সমর্থনের প্রতিফলন দেখা যাবে।’

বরিশালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপিপন্থীরা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া জামায়াতেরও চারজন প্রার্থী আছেন। এসব প্রার্থী নিজেদের জয় নিশ্চিতে সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে হাজির করবেন। তাঁদের ভোট দিতে মেয়র পদেও ভোট দেবেন ভোটাররা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের অধিকাংশ ভোট কামরুলের টেবিলঘড়ির পক্ষে যেতে পারে।

রাজনীতি পর্যবেক্ষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখানে ইসলামী আন্দোলন প্রচার-প্রচারণায় সাড়া জাগাতে সক্ষম হলেও ভোটের সমীকরণে আওয়ামী লীগের প্রধান বাধা হবেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী কামরুল, এটা এখন পরিষ্কার। কামরুলের বাবার ভাবমূর্তি, বিএনপির ভোটারদের আনুকূল্য তাঁকে (কামরুল) নীরবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।