শ্বশুরবাড়িকে সায়েস্তা করতে গায়ে আগুন দেন গৃহবধূ, পরে মৃত্যু

পটুয়াখালীর দুমকিতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আগুনে পুড়ে নিহত এক গৃহবধূর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, ওই গৃহবধূ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ‘সায়েস্তা’ করতেই চাচাতো ভগ্নিপতিকে নিয়ে আগুনের নাটক সাজান। কিন্তু পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চাচাতো ভগ্নিপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তার নাম আরিফ হোসেন সিকদার। তিনি মিমের ফোন পেয়ে ঢাকা থেকে দুমকিতে আসেন। 

মঙ্গলবার সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম। 

তিনি জানান, চার বছর আগে দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের সাতানী গ্রামে মিমের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিলো। মিম দম্পতির পাঁচ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।  

পুলিশ সুপর জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে গত দুই জুন বাড়ি ছেড়ে দুমকি উপজেলা সদরের নতুন বাজারের ভাড়া বাসায় ওঠেন মিম দম্পতি। ৮ জুন দুপুরের খাবার খেয়ে স্বামী প্রিন্স তার কর্মস্থলে চলে যান। বেলা ৩টার দিকে প্রতিবেশীরা ভাড়া বাসায় আগুনের ধোঁয়া ও মীমের চিৎকার শুনে বাইরে থেকে দেয়া ছিটকানী খুলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেন। ওই সময় মীম সবাইকে বলছিলেন, নাক-মুখ ঢাকা একজন পুরুষ এবং বোরকা পড়া এক মহিলা তার হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেল আগুন ধরিয়ে পালিয়ে গেছে। 

মুমুর্ষু অবস্থায় ওইদিনই পটুয়াখালী, বরিশাল হয়ে রাতে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে ৯ জুন বিকেল চারটায় সেখানে তার মৃত্যু হয়। ওই দিনই মিমের মামা ওমর ফারুক বাদি হয়ে শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন উল্লেখ করে দুমকি থানায় মামলা করেন। তাদের পিয়ার বেগকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনার দিনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করতে গিয়ে মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ পড়া এক যুবককে অস্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে দেখে। শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে ওই যুবককেই শনাক্ত পুলিশ শনাক্ত করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক রাজারবাগ এলাকার বাসা থেকে আলামত হিসেবে ওই দিনের পরা পোশাক জব্দ করা হয়। 

পুলিশকে আরিফ জানায়, সে নিহত মিমের চাচাতো ভগ্নিপতি। পারিবারিক অশান্তির কথা জানিয়ে মিম প্রায়ই তাকে ফোন দিতো। এখান থেকে বের হওয়ার অংশ হিসেবে ঘরে আগুন লাগানো পরিকল্পনাটি মিমের। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পুড়ে মারতে চায় এমন কিছু সবার সামনে তুলে ধরে এখান থেকে বের হওয়া। 

ঘটনার দিন মিম আরিফকে ঢাকা থেকে দুমকিতে আসেন এবং এই ঘটনায় অংশ নেন। এসময় মিমের সন্তানকে অন্য ঘরে রাখা হয়। মিমের পরামর্শে এ ঘটনায় সে একাই জড়িত। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর অজ্ঞাতনামা দুজনের কথা বলার পেছনে শাশুড়ি ও স্বামীকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা ছিল বলে দাবি করেন আরিফ। 

তার দাবি, মিম মারা যাবে এটা পরিকল্পনায় ছিল না। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঢাকা থেকে আটকের পর ১১ জুন গভীর রাতে দুমকি থানায় আরিফ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার তিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত চলছে। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।