কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় সাত কেন্দ্রে নৌকার পরাজয়

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। তবে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের নির্বাচনি এলাকার সাতটি কেন্দ্রে নৌকা পরাজিত হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনের আগে এমন ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

কেসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী-১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে আবদুল খালেক নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার প্রার্থী মো. আবদুল আউয়াল ৬০ হাজার ৬৪ ভোট পান। তাদের ভোটের ব্যবধান ৯৪ হাজার ৭৬১টি। ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে সাতটি কেন্দ্রে হাতপাখার কাছে নৌকা পরাজিত হয়েছে। সাতটি কেন্দ্রই খুলনা-৩ আসনের। এখানকার সংসদ-সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। দৌলতপুর ও খালিশপুর থানার তিনটি ওয়ার্ডের সাতটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে যাওয়া এখন টক অব দ্য টাউনের রূপ নিয়েছে।

নৌকার পরাজিত হওয়া ৩নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রটি প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির কাছাকাছি। ৪নং ওয়ার্ডের ছয়টি কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি কেন্দ্রে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। অথচ এ ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের নেতা, মহানগর যুবলীগের নেতা, বিএল কলেজ ছাত্রলীগের নেতাসহ হেভিওয়েট অনেক নেতার বসবাস। যাদের বেশিরভাগই প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন। গত কেসিসি নির্বাচনেও এ ওয়ার্ডে খালেক ভালো ফলাফল পেয়েছিলেন। সাত কেন্দ্রে নৌকার এমন ভরাডুবির নানা কারণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এবার মেয়র পদে আবদুল খালেকের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত ছিল। তবে কোনো কেন্দ্রে তার পরাজয় হবে এটা আশাতীত ছিল না।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৪নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কর্মীর থেকে নেতার সংখ্যা বেশি। এ কারণে এমন ভরাডুবি হয়েছে। এছাড়া এ এলাকায় এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। যার কারণে এমন পরাজয় হতে পারে। সঠিক নেতৃত্ব না থাকাটাও একটা বড় কারণ বলে একাধিক নেতাকর্মীরা জানান।

হাতপাখা সাতটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করেছে। এর মধ্যে ৬টি কেন্দ্র নগরীর দৌলতপুর থানার ৩ ও ৪নং ওয়ার্ডে এবং ১টি কেন্দ্র খালিশপুর থানার ৯নং ওয়ার্ডে। দৌলতপুর থানার ৩নং ওয়ার্ডের ২৩নং কেন্দ্র কার্তিককুল সালেহা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (উত্তর পাশ) কেন্দ্রে নৌকা ৪৪৭ ও হাতপাখা ৫১৭ ভোট পেয়েছে। ২৫নং কেন্দ্র দেয়ানা মহিলা দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকা ৫৪৮ ও হাতপাখা ৫৬৩ ভোট পেয়েছে। ২৭নং কেন্দ্র দেয়ানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (পশ্চিম ও দক্ষিণ) কেন্দ্রে নৌকা ৪৬১ এবং হাতপাখা ৬৭৭ ভোট পেয়েছে। ২৮নং কেন্দ্র দেয়ানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (পূর্ব ভবন) কেন্দ্রে নৌকা ৫৪৪ ও হাতপাখা ৬৫০ ভোট পেয়েছে। ২৯নং কেন্দ্র দেয়ানা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ৫০৬ ও হাতপাখা ৭৯৫ ভোট পেয়েছে। ৩০নং দেয়ানা দক্ষিণপাড়া আজিজুল মেমোরিয়াল ক্লাব কেন্দ্রে নৌকা ৪৮১ ও হাতপাখা ৬৭৬ ভোট পেয়েছে। এছাড়া খালিশপুর থানার ৯নং ওয়ার্ডের সরকারি দৃষ্টি ও বাক-শ্রবণ-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ৪৭৯ ও হাতপাখা ৮০৭ ভোট পেয়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা জানান, কেন এমন পরাজয়-তা নিয়ে কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়নি। তবে খুব দ্রুত বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা হবে। আগামীতে কীভাবে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, কীভাবে এখানে নৌকার পরাজয় হয়েছে সেটা জানি না। আমাদের কোনো নেতা ভোট দেয়নি। তবে কর্মী-সমর্থকদের আটকে রাখা অনেকটা মুশকিল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।