সৌদি আরবের চাপে বাংলাদেশ, কপাল খুলছে ৬৯ হাজার জনের।

বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস এখন সৌদি আরব। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি কমীর্‍ রয়েছে। এসব প্রবাসীরা প্রতি বছর দেশে পাঠান প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

বাংলাদেশ থেকে কমীর্‍ হিসেবে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়াও বেশ সহজ। এই সুযোগ ব্যবহার করে বাংলাদেশি না হয়েও অনেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছেন। এমনই ৬৯ হাজার মানুষের পাসপোর্ট দিতে সৌদি আরবের চাপে রয়েছে বাংলাদেশ।

গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশি না হয়েও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরব গেছেন বহু মানুষ। যাদের রোহিঙ্গা বলে শনাক্ত করা হচ্ছে। এদের মধ্যে প্রায় ৬৯ হাজার মানুষের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওই ৬৯ হাজার মানুষকে নতুন করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে ঢাকার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে সৌদি আরব। ফলে বিপুল সংখ্যাক রোহিঙ্গা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছেন। পাসপোর্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) খবর প্রকাশ করেছে দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তারা রোহিঙ্গা কিনা জানি না। ওরা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে অনেক আগে সৌদি আরব গিয়েছিল। সেখানে তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন সৌদি সরকার চাপ দিচ্ছে পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য। আমাদের একটি টিম সৌদি গেছে। এ ব্যাপারে তারা কাজ করছে।’

গত বছরের ১৩ নভেম্বর সৌদি সরকারের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদ বাংলাদেশ সফর করেন। এ সফরে তিনি ৬৯ হাজার রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেন। এ সময় তিনি ওই রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেয়ার অনুরোধ করেন। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন নাসের বিন আবদুল আজিজ।

আবদুল আজিজের বাংলাদেশ সফরের পর এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি বা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। গেল ১১ মার্চ ওই কমিটির ১০ম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তবে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (ইমিগ্রেশন) আলী রেজা সিদ্দিক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কে বলেছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ কেন রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিতে যাবে?’

এ সময় সৌদির উল্লিখিত ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার তালিকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘সৌদি এখনও তালিকা দেয়নি। তারা আগে তালিকা দিক, তখন যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। যারা বাংলাদেশি তারাই শুধু পাসপোর্ট পাবে।’

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানুও বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সৌদিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদান নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সেদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।