ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে ছাত্রদলের ৩ নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগের পিটুনি

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের তিন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে জখম করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার রাতে শহরের কলেজ রোড ডাকবাংলো এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার ছবি তুলতে গেলে লাঞ্ছিত করা হয় গণমাধ্যম কর্মীদের। সাংবাদিকদের মোবাইলও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মারধর করা হয় জাগো নিউজের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মোবাশ্বির শ্রাবণকে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর ছাত্রদল।

আহতরা হলেন মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম রাজীব, ছাত্রদল কর্মী কাজল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি অনিক এবং তার বন্ধু সোহাগ। আহতদের মধ্যে রাজীবের অবস্থা গুরুতর। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর ছাত্রদল। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির নেতারা।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে শহরের কলেজ রোড এলাকায় দুই ছেলেকে মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগের ৩০ থেকে ৪০ নেতাকর্মী। এ সময় ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। পরে দুজনের একজন দৌড়ে প্রাণ বাঁচান। ঘটনার কিছুক্ষণ পরই হাজির হন ছাত্রদলের রাজীব ও কাজল। এ সময় তাদেরও মারধর করা হয়। লাঠি, বাঁশ ও ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় রাজীবের মুখ। খবর পেয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু উপস্থিত হলে রাজীব ও কাজলকে ডাকবাংলোর ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ঘটনার পর গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ছবি তুলতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হন মহানগর ও কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় জাগো নিউজের প্রতিনিধি মোবাশ্বির শ্রাবণকে মারধর ও আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি সাবিত আল হাসানের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিএনপির নেতারা ইজিবাইকে তুলে আহত ছাত্রদল নেতাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে ফের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের সামনেই তাদের মারধর করেন। লাঞ্ছিত করা হয় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনুকে।

পরে পুলিশে খবর দেন বিএনপি নেতারা। সদর থানা পুলিশের একটি টিম এসে ছাত্রদলের রাজীব ও কাজলকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় এবং পরে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মারধরের শিকার জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি মোবাশ্বির শ্রাবণ বলেন, মারধরের খবর পেয়ে ডাকবাংলোর সামনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করতেই আমার ও আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি সাবিতের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পরই আমার জামার কলার ধরে টেনে নিয়ে মারধর ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

আহত ছাত্রদল নেতাদের ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, তারা এখানে ছিনতাই করে প্রায়ই। কলেজের ছাত্রদের ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন। আজ তাদের হাতেনাতে ধরে এলাকাবাসী ও কলেজের ছাত্ররা মারধর করেছে। সাংবাদিকের ওপর আক্রমণের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমরা এটার জন্য লজ্জিত এবং দুঃখ প্রকাশ করছি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ছাত্রদল নেতা রাজীব আমাকে জানান ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে মারধর করে ফেলে রেখেছে। আমি খবর পেয়ে এসে রাজীবকে ডাকবাংলোর এক পাশে নিয়ে যাই। তাকে অটোরিকশায় তুলতে গেলে ছাত্রলীগের ছেলেরা ফের মারধর করেন। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। ছাত্রলীগের নেতা রিয়াদের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। আমরা মনে করি আমেরিকায় শামীম ওসমানকে হেনস্তা করার প্রতিশোধ নিতেই অতর্কিতভাবে ছাত্রদলের মেধাবী নেতাদের ওপর হামলা করেছেন রিয়াদ ও তার অনুসারীরা।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। কে কাকে মেরেছে এবং ঘটনাটা কী, তা এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।