বাংলাদেশের নির্বাচনসেই চিঠির ৩ বিষয় আমলে নিল ইইউ

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য। সেই চিঠি আমলে নিয়ে বাংলাদেশের তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন জোসেপ বোরেল। আগামী দিনে এই তিন বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে ইইউ। খবর জিওপলিটিক্স।

গত ১২ জুন জোসেপ বোরেলকে এ চিঠি দিয়েছিলেন ছয় ইউরোপীয় সংসদ সদস্য। চিঠিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিরোধ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো সম্পৃক্ত করে চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজে বের করতে শুধু সংলাপে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা।

গত ৬ জুলাই তাদের সেই চিঠি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আরেকটি চিঠি দেন জোসেপ বোরেল। এর দুদিন পর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন শুরু হয়। ওই চিঠিতে তিনি তিনটি পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো—

ইইউর পর্যবেক্ষেণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচন

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জোসেপ বোরেলের কার্যালয়।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সব মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ ও সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তিনি প্রধান দলগুলোর মধ্যে প্রকৃত সংলাপ আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন।

মানবাধিকারে বিশেষ গুরুত্ব

২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ২৩ বিলিয়ন ইউরো বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হয়েছে। আর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারও ইউরোপীয় দেশগুলো।

চলতি বছরের শেষে ইউরোপীয় বাজারে জিএসপি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। তবে ২০২৪ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত জিএসপি-প্লাস সুবিধা দাবি করে আসছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

বোরেলের চিঠি অনুযায়ী, জিএসপি সুবিধা পেতে হলে বাংলাদেশকে ‘১৫টি মূল নীতি’র মধ্যে থেকে মৌলিক মানব ও শ্রম অধিকারের নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এ সর্ম্পকে শিগগিরই বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে ইইউ।

এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) ও জিএসপি-প্লাস সুবিধা বাংলাদেশের পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে বোরেলের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশে তেমন আলোচনা হয় না। তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৮ সাল থেকে অনেক দিন জেলে থাকার কারণে তিনি নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।

জোসেপ বোরেল জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি সবচেয়ে ভালো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন কি না, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আইনের শর্ত দিয়ে বর্তমান সরকার তাকে যে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না সেটিও চিঠিতে উঠে এসেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।