দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচননির্বাচন পর্যবেক্ষণে ঢাকায় অফিস খুঁজছে ইইউ

পাঠানো

আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও এবার অবস্থান বদলাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে এরই মধ্যেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকায় অফিস খোঁজা শুরু করেছে তারা। প্রাথমিকভাবে বাংলামটরের রূপায়ণ টাওয়ারে একটি ফ্লোর দেখা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরা ও বারিধারা এলাকায়ও অফিসের জন্য উপযুক্ত জায়গা খোঁজা হচ্ছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল এবং তার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সামগ্রিক কাজের জন্য আগামী মাসের মধ্যেই ঢাকায় অফিস গোছানোর কাজ শেষ করতে চান ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি অফিস খোঁজার বিষয়টি স্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, তারা সবেমাত্র অফিসের জন্য সম্ভাব্য জায়গার খোঁজ করছেন। তবে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ মিশন পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে গত ৯ জুলাই দুই সপ্তাহের সফরে বাংলাদেশে আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)

প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়নের জন্য এরই মধ্যে প্রতিনিধিদলটি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছেন। আগামী ২৩ মে তাদের বাংলাদেশ ছাড়ার কথা।

এসব বৈঠকে সরকার ও তাদের শরিক দলগুলো বর্তমান সংবিধানের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, সংবিধানের ব্যত্যয় না ঘটিয়েই নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে।

অন্যদিকে বিপরীত যুক্তি তুলে ধরে সরকারবিরোধী দলগুলোর নেতারা বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতে এ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল অংশ নেবে না।

জানা গেছে, বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রাপ্ত মতামত পর্যালোচনা করছে ইইউর ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল। বিশেষ করে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া, আইন ও বিধিবিধান, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে

প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলের কাছে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে—আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) পাঠাবে কি না?

জানা গেছে, বিদেশি প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নিতে হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য এরই মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে যোগাযোগ শুরু করেছে পৃথিবীর বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা।

সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে এরই মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। সেই আলোকেই ঢাকার সুবিধাজনক জায়গায় অফিস খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারের কয়েকটি প্রভাবশালী দপ্তরের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেছেন। প্রতিনিধিদল পাঠানোর ক্ষেত্রে যেসব আনুষঙ্গিক নিয়ম অনুসরণ করতে হয়, সেসব বিষয় আমলে নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন তারা।

অফিস খোঁজার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে ইইউ প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছে। এ সময় নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। কোনো বিষয়েই তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি।’

জানা গেছে, প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধিদলের তৎপরতার পাশাপাশি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ঘটনার ওপরও তীক্ষ্ণ নজর রাখছে ইইউ। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার ঘটনা তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকারও তারা নজরে রাখছেন। গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা তারা আমলে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের অবস্থান ও ভূমিকা সম্পর্কেও চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের মূল্যায়নকে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে। এ কারণে ইইউ প্রতিনিধিদল সময় নিয়ে হলেও বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ত্রুটি এবং ঝুঁকির জায়গাগুলো (রিস্ক ফ্যাক্টর) নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কারণ যারা এ মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর করছেন, তারা প্রাথমিক অনুসন্ধানী দল। তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। তারা শুধু তথ্য নিচ্ছেন। এরপর সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট আকারে পেশ করবে। তার ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতনরা পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ জুলাই বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতার বাসায় নৈশভোজে যোগ দেবেন ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। বিএনপির পক্ষ থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করছেন ওই নেতা। নৈশভোজের আয়োজনে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।