পটুয়াখালীতে তুচ্ছ ঘটনার জেরে রেস্ট হাউজের ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর ফকিরের (৩৮) গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পাঁচদিন পর, বুধবার রাত সাড়ে দশটায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে তিনি মারা গেছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বজন ওবায়দুল মামুন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগুনে জাহাঙ্গীরের শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই কয়দিন বিকল্প পদ্ধতিতে তাকে খাবার দিয়ে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার তিনদিনের মাথায় ৫ জুন পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেছিলেন জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই জামাল ফকির।
ভাই জামাল ফকির জানান, জাহাঙ্গীর ফকির র্দীঘদিন পটুয়াখালী পৌর এলাকার ফায়ার সার্ভিস রোডের সিকদার রেস্ট হাউজে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। জাহাঙ্গীরের বাড়ি দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের চরগরদিতে গ্রামে। জাহাঙ্গীর ওই গ্রামের জয়নাল ফকিরের ছেলে এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।
মামলার বাদিসহ পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী শহরের ফটিকের খেয়াঘাট এলাকার স্থানীয় শাহিন গাজীর ছেলে ঘটনায় অভিযুক্ত সাকিব গাজী (২২) সিকদার রেস্ট হাউজের কক্ষে ঢুকে দলবলসহ প্রায়ই মাদক সেবনসহ অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতেন। দলবল নিয়ে হুমকির কারণে প্রায়ই সাকিবকে রেস্ট হাউস কক্ষের চাবি দিতে হতো।
ঘটনার কয়েক দিন আগে সাকিব কক্ষের চাবি চাইলে মালিকের নির্দেশে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান জাহাঙ্গীর। এতে সাকিব ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীরকে হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যান। এরপর গত ২ জুন বিকালে সাকিব তার সঙ্গীদের নিয়ে সিকদার রেস্ট হাউসের তৃতীয় তলায় উঠে অফিস কক্ষে অবস্থান করে আগের মতো কক্ষে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করে চাবি চান। যা দিতে অস্বীকৃতি জানান জাহাঙ্গীর।
এ সময় সাকিব সঙ্গে থাকা সহযোগীদের সহায়তায় জাহাঙ্গীরের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। জাহাঙ্গীরের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে প্রথমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জাহাঙ্গীরকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রেফার করে এবং ওই রাতেই তাকে ঢাকায় নেয়া হয়।
সেখানে আইসিইউতে পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার রাত সাড়ে দশটায় তিনি মারা যান। বর্তমানে তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পরে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ ঘটনায় সোমবার (৫ জুন) ভিকটিমের ভাই ছোটভাই জামাল ফকির বাদি হয়ে সাকিব গাজীসহ দু’জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা পাঁচজন মোট সাতজনকে আসামি করে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ভিকটিমের মৃত্যু হওয়ায় এটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশের জোর তৎপরতা চলছে।