নুরপন্থিদের প্রতিহতের ঘোষণা রেজাপন্থিদের

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের (নুরুল হক নুর) ডাকা কাউন্সিল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াপন্থিরা। আজ ১০ জুলাই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নুরপন্থিদের কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ অধিবেশন। তবে একই সময়ে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন রেজাপন্থিরা। এ নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে রেজা কিবরিয়াকে শর্তসাপেক্ষে দলে ফিরিয়ে নেওয়া এবং স্বপদে বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন নুরুল হক নুর।

গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেজাপন্থিরা যে কোনো মূল্যে আজকের কাউন্সিল প্রতিহত করবেন। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ সদস্য ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের নেতাকর্মীরাও নুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি রেজা কিবরিয়ার অপসারণ অবৈধ দাবি করে লিখিত আবেদন করেছেন দলটির অন্তত ৫০ কেন্দ্রীয় নেতা। গতকাল তারা লিখিত আবেদন নির্বাচন কমিশনে পৌঁছে দেন।

সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান তুহিন কালবেলাকে বলেন, অসাংগঠনিক সিদ্ধান্ত মানি না। নিজের কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত করতে নুরুল হক নুর স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তে রেজা কিবরিয়াকে বহিষ্কার করেছেন। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ সদস্য এই সিদ্ধান্ত মানেন না।

জানা যায়, নুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে রয়েছেন হাসান আল মামুন, ফারুক হাসান, আতাউল্লাহ, কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, তারেক রহমান, জাকারিয়া পলাশ, এম জেড আবেদিন (শিশির), আরিফুর রহমান তুহিন, মো. শামসুদ্দীন. শাহাবুদ্দিন শুভ, ড. আব্দুল মালেক ফরাজি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাবিব, মেজর (অব.) আমিন আহম্মেদ আফসারি, অতিরিক্ত দায়রা জজ (অব.) শামসুল হক, ব্যারিস্টার জিসান মহসিন, আবু সাঈদ মুসা, আবুল বাশারসহ অনেক নেতা।

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক ড. আব্দুল মালেক ফরাজি, গাজীপুর মহানগরের আহ্বায়ক পাঠান আজহারসহ ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর নেতারাও নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। একইভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীকে সমবেত করার চেষ্টা করছেন নুরপন্থিরাও। তারা চাইছেন, রেজা কিবরিয়াপন্থিরা যেন কাউন্সিলে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন।

এদিকে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইনসাফ কমিটি ও শওকত মাহমুদদের সঙ্গ ছাড়লে গণঅধিকার পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াকে আবারও দলে ফেরানো হবে। তিনি বলেন, রেজা কিবরিয়া আমাদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। যদি তিনি ঘোষণা দেন গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদ মাসুদ করিম, এনায়েত করিমদের তৎপরতা, এতে তিনি অংশ হবেন না। ইনসাফ কমিটিসহ শওকত মাহমুদদের কোনো প্রোগ্রামে যাবেন না। এই কথাটা দিলেই, আমরা আগামীকাল তাকে দলে ফিরিয়ে নেব। কিন্তু রেজা কিবরিয়া সেখানে জিম্মি হয়ে আছেন। ওখান থেকে সুবিধা পাচ্ছেন। ওই মধু তিনি ছাড়তে পারবেন না। ভুল বুঝতে পেরে জনগণের সামনে দুঃখ প্রকাশ করলে বহিষ্কৃতদের আগের পদ ও অবস্থান নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান নুর।

তিনি বলেন, প্রতিকূল সময়েও কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আট সদস্যের উচ্চতর পরিষদ গঠিত হবে। সেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।

রেজা কিবরিয়ার অনুসারী আরিফুর রহমান তুহিন কালবেলাকে বলেন, আজ সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত বিক্ষোভ করা হবে। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে ন্যক্কারজনক হামলা চালাচ্ছে, সচেতন মানুষ হিসেবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি গণঅধিকার পরিষদের নাম ভাঙিয়ে দলের যেসব নেতা ইসরায়েলি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান তাদেরও প্রতিহত করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।